খোরশেদ আলম রাজু নওগাঁ প্রতিনিধিঃ অজানাকে জানার লোভে,প্রেম প্রণয় বিক্ষোভে, চলো সবাই বই পড়ি নিত্য কোন অবকাশে। অব্যক্ত দু’লাইন কবিতার পংক্তিই বলে দেয়,যে গানে সুর,তাল আর লয় শব্দহীন, তবুও লেখক ও পাঠকের অন্তরে ঠিকই এক ধরনের দৃশ্যহীন সুর,তাল লয় খেলা করে। এ লেখালেখির সাথে জড়িত (লেখক) খেলায় যারা মত্ত তারাই মূলত যুগযুগ ধরে ঘুনেধরা জাতিসত্তার শেকড়কে উজ্জবীত বা পুস্পিত করে রাখে। এমন ধারাবহিকতায় ‘নওগাঁর লেখক নওগাঁর বই’স্লোগানে ব্যাতিক্রমধর্মী একদিনব্যপী এই বই মেলার আয়োজন করে নওগাঁ সাহিত্য পরিষদ।
সচরাচর বই মেলা লক্ষনীয় হলেও শুধুমাত্র একটা জেলা কেন্দ্রীক লেখকদের বই নিয়ে এমন আয়োজন নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। নওগাঁ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মুক্তির মোড় জেলা পরিষদ পার্কের ফুটপাত ধরে সারাদিনব্যপী চলে এ বই মেলা। সকাল ১০ টায়
এমন ব্যতিক্রমধর্মী মেলায় কথা সাহিত্যিক বরেন্দ্র ফরিদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন জেলা কালচারাল অফিসার তাইফুর রহমান,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি আতাউল হোক সিদ্দিকী, প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান,কলামিস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম রফিকুল ইসলাম,জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কায়েস উদ্দিন,টগর মেহেদী হাবিব রতন,
কবি,প্রাবন্ধিক,কথাসাহিত্যিক,চর্যাপদ গবেষক সহ নবীন ও প্রবীণ সাহিত্যিক চেতনার লেখকগন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকালের দিকে দর্শনার্থীদের তেমন ভিড় চোখে না পড়লেও বিকেল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল পার্ক গেটের দুপাশটি। এ যেন প্রতিদিনের তুলনায় আলাদা এক চিত্র।
প্রতি বছর জাতীয় একুশে বই মেলা সহ সরকারী বেসরকারীভাবে নানা স্থানে বই মেলার আয়োজন হয়। সেই ষ্টলগুলোতে বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত হয় দেশী বিদেশী বিভিন্ন লেখকের বই। কিন্ত একদিনব্যপী ব্যতিক্রমী এই বই মেলায় সকল ষ্টলে শুধুমাত্র নওগাঁর লেখকদের বই’ই বিক্রয় ও প্রদর্শিত হয়। যা সচরাচর বই মেলা থেকে একটু আলাদা।বিভিন্ন ধরনের বইয়ে ভিন্নভিন্ন বিষয়বস্তু তুলেধরা হলেও অধিকাংশ লেখকের বইয়ে উঠে এসেছে নওগাঁর ইতিহাস ঐতিহ্য আর সম্ভাবনা।
নওগাঁ বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা উত্তরের জেলা। গাঁজা মহলখ্যাত এ জেলায় রয়েছে এশিয়া মহাদেশের অন্যতম প্রচীন বিদ্যপীঠ সোমপুর মহাবিহার,জগদ্দল বিহার,আলতাদিঘী,ভীমের পান্টি,কুসুম্বা মসজিদ,হলুদবিহার,জবই বিল,রবীন্দ্রকুঠী বাড়ি, একাধিক বৃট্রিশ স্থাপনা সহ ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে যোজিত কৃত্রিম ও প্রকৃতির অপার ধারায় সবুজের পুস্পিত লীলাভুমি। এ ভূমিতেই জন্ম নেওয়া বিশুদ্ধ বাতাসে বেড়ে উঠেছে অনেক কৃতিসন্তান। তার মধ্যে লেখক হিসেবে স্বরণ করতে হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত তালিম হোসেন,শাহ আলম চৌধুরী,মুমিনুল হক তালুকদার খান সাহেব আফজাল,নাসিমা নাঈস সহ আরো অনেকে।
এছাড়াও নওগাঁ সাহিত্য পরিষদের ছায়াতলে রয়েছে একঝাঁক নবীণ ও প্রবীণ লেখক যাদের বই জাতীয় একুশে বই মেলা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়।
নওগাঁ জেলা শুধু ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ঝুড়ি মাথায় নিয়ই দাড়িয়ে নেয়,এই জেলায় রয়েছে শতবর্ষী দুটি লাইব্রেরি যেখানে আজও সংরক্ষিত আছে হাতে লেখা কোরআন শরীফ, তাল পাতায় লেখা পুঁথি সহ আদিকালের বিভিন্ন বই। অতীতকাল থেকেই এ জেলার কিছু ব্যক্তি সাহিত্যক চেতনায় শৈল্পিক সৃষ্টির চাষ করেছিল যা শতবর্ষী লাইব্রেরী দুটি তার দৃষ্টান্ত।
এ মেলার মিডিয়া পার্টনার প্রজন্মের আলোর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান রিজভী বলেন,এ বই মেলা ব্যতিক্রমী একটা আয়োজন যা নতুন প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা।
এ মেলায় নওগাঁর কতজন লেখকের বই প্রদর্শিত হয়েছে এমনটা জানতে চাওয়া হলে নওগাঁ সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি ও চর্যাপদ গবেষক আশরাফুল নয়ন দৈনিক রুপালী বাংলাদেশ কে বলেন,৫০ জন লেখকের প্রায় দুই শতাধিক বই প্রদর্শিত হয়েছে। এই মেলার উদ্দ্যেশ হলো নতুন প্রজন্মকে উজ্জবীত করা তারা যাতে আধুনিকায়নের যুগে অবাঞ্চিত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে একটি সুষ্ঠু সমাজ গঠনে সাহিত্যিক মানসিকতায় নিজেকে তৈরী করতে পারে। সেই সাথে নওগাাঁর লেখকদের বই ও নওগাঁ সম্পর্কে পুরো বিশ্ব জানতে পারে এটাই মূলত আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ।
নওগাঁ শহরের আলুপট্টি যা স্থানীয়েেদর কাছে হাটখোলা নামে পরিচিত। প্রায় একযুগ পূর্বে এই হাটখোলার একটি টিনশেডের আটচালা থেকেই বলা যায় নওগাঁ সাহহিত্য পরিষদের জন্ম। যেখানে সন্ধ্যার পরপরই জড়ো হতে থাকে লেখক ও সাহিত্যমনা ব্যক্তিরা। চলতো চা চক্র,মাঝে নানা গল্প কাহিনীর ফুলছুড়ি কিন্তু মূলে থাকতো সাহিত্যের চাষ। ধীরে ধীরে সাহিত্যের চাষ প্রসার হতে শুরু করলে একসময় আটচালার শেকড়কে লালিত করে বৃহৎ চেতনায় নওগাঁ সাহিত্য পরিষদ নামের সংগঠনটি নামায়িত হয়।
নওগাঁর লেখকদের এমন কিছু বই রয়েছে যেখানে উঠে এসেছে মাটির নিচে চাপা পরা ইতিহাস ঐতিহ্য, প্রেম,বিরহ,মায়া,মমতা আর সৃষ্ট পৃথিবীর মাঝে বিদ্যমান অপার প্রকৃতির মধ্যে লুকায়িত সত্তার সত্য কথন।
এরকম আরো সংবাদ পড়ুন...