কুমিল্লায় টানা বৃষ্টির ফলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং অলিগলির রাস্তাগুলি পানিতে তলিয়ে গেছে, এবং অধিকাংশ সড়ক হাঁটু বা কোমর পরিমাণ পানির নিচে। সড়ক ও ড্রেনের ওপর ময়লা ও আবর্জনা মিশ্রিত দূষিত পানি জমে আছে। জলাবদ্ধতার কারণে কর্মজীবী নারী-পুরুষ, রোগী এবং বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বুধবার (২১ আগস্ট) কুমিল্লার অধিকাংশ সড়কের এমন চিত্র দেখা গেছে। গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার কিছু নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারত থেকে আসা পানির স্রোতে গোমতীর বাধ ভেঙে বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেমন মনোহরপুর, দক্ষিণ চর্থা, টমছমব্রিজ, শাকতলা, গোবিন্দপুর, বিসিক শিল্পনগরী, ঝাউতলা, রেইসকোর্স, কাঠেরপুল, কান্দিরপাড়, টাউন হল মাঠ, স্টেডিয়াম, বজ্রপুর রোড, ছাতিপট্টি, চকবাজার, থিরাপুকুর পাড়, নজরুল এভিনিউ, ডিসি রোড, ছায়াবিতান, বিসিক, মুরাদপুর, বাগিচাগাঁও, কালিয়াজুরি সহ বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা সমস্যার মুখে পড়েছেন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসেও পানি ঢুকে পড়ায় রোগী ও স্টাফরা ভোগান্তিতে আছেন।
মনোহরপুর থেকে শাকতলা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়ক জলের নিচে রয়েছে এবং খালের ময়লা ও আবর্জনার কারণে এটি একেবারে জর্জরিত। যানবাহন সংকটে অনেক মানুষ হাঁটু পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন, এবং ছোট যানবাহন রাস্তার গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, অপরিকল্পিত রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নকশা বহির্ভূত নির্মাণ, এবং ড্রেনের জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ধীর গতিতে চলছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে।
কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল বলেন, জলাবদ্ধতা নগরবাসীর নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে এই অভিশাপ থেকে মুক্তির কোনও উপায় নেই।
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ভোর ৬টা থেকে ৩ ঘণ্টায় ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, গোমতী নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং পানি লেভেল ক্রমাগত বাড়ছে। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম বলেন, ড্রেন সংস্কার ও পরিষ্কারের কাজ চলছে। তবে টমছমব্রিজ থেকে নোয়াগাঁও চৌমুহনী পর্যন্ত খালের সরু হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতি উন্নতির আশা রয়েছে।