নওগাঁর মহাদেবপুরে চাঁন্দাশ ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপনের বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের নির্বাচিত ১০ জন মেম্বার অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে তারা বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগের বাসভবনে গিয়ে দাখিল করেন। রোববার (১৮ আগস্ট) ইউএনও বিষয়টি আমলে নেন।
ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার খাইরুল ইসলাম, ৩নং ওয়ার্ডের আবদুর রহমান মোল্লা, ৫নং ওয়ার্ডের হবিবর রহমান, ৬নং ওয়ার্ডের আবদুস সামাদ, ৭নং ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান, ৮নং ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান মীর্জা, ৯নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর আলম, সংরক্ষিত ১,২,৩নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মী রাণী, ৪,৫,৬নং ওয়ার্ডের শারমিন সরকার এবং ৭,৮,৯নং ওয়ার্ডের শাকিলা বেগম লিখিত অনাস্থা প্রস্তাবে উল্লেখ করেন যে, গত ঈদে দুস্থদের জন্য বরাদ্দ করা চাল সম্পূর্ণ বিতরণ না করে এখনও ১৪ বস্তা চাল চেয়ারম্যান তার নিজ জিম্মায় মজুদ করে রেখেছেন।
চালগুলো প্যানেল চেয়ারম্যান আজাহার আলী, ইউপি সদস্য মাহফুজুর রহমান ফিরোজ ও দফাদার আয়নাল হকের সহযোগিতায় চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৫ আগস্ট ইউপি চেয়ারম্যান ৫টি এজেন্ডা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সভা আহ্বান করেন। কিন্তু তিনি কোন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা না করে সেদিন শোক দিবসের আলোচনা করতে থাকেন। এর প্রতিবাদ করে ওই ১০ জন মেম্বার সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। চেয়ারম্যান মেম্বারদের দিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা করিয়ে দেয়ার নাম করে দেড় হাজারের বেশি মানুষের কাছ থেকে কমপক্ষে দেড় হাজার করে টাকা নেন। এ ছাড়া ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিকদের দিয়ে ২২দিন চেয়ারম্যান তার নিজের পুকুর কাটিয়ে নেন। তারা এসব কারণে চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবি জানান। এ ছাড়া আরো অনেক অনিয়মের বিষয় তদন্তের সময় প্রমাণসহ উপস্থাপন করবেন বলে উল্লেখ করেন।
রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে বিষয় জানতে চাইলে মোবাইলফোনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ জানান, অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনটি জেলা প্রশাসকের নিকট পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠাবেন।
আগের দিন শনিবার দিবাগত রাতে ওই ১০ ইউপি সদস্য উপজেলা সদরের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যানের আরো নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরেন। তারা জানান, এই ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এই ইউনিয়নের আবদুল জব্বারের ছেলে মিরাজুল ইসলাম তার জমিজমা সংক্রান্ত মামলার কাজে লাগানোর জন্য তার মৌরশ মৃত গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী মৃত আয়মন বেওয়ার একমাত্র ওয়ারিশ ভ্রাতা মৃত অবির উদ্দিনের নামে একটি ওয়ারিশান সার্টিফিকেটের আবেদন জানান। কিন্তু চেয়ারম্যান আগেই আয়মনের দুই ছেলে মৃত আসকর ও মৃত লসকর ও এক মেয়ে মৃত হালিমা ওয়ারিশ রয়েছেন বলে সার্টিফিকেট দেন। এই সার্টিফিকেটটি ভূয়া বলে মিরাজুল দাবি করেন। তিনি জানান, মৃত্যু সনদে আসকরের পিতা দেখা যায় মৃত আলম। অন্যরাও আয়মনের কেউনা। জমিজমার মামলায় জেতার জন্য চেয়ারম্যান ভূয়া সার্টিফিকেট দেন। মিরাজুল এর প্রতিবাদ জানালে গত ৭ মার্চ দিবাগত রাতে কয়েকজন চৌকিদার মিরাজুলকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সাবেক মেম্বার পরিমলের টর্চার সেলে নিয়ে যায়।
সেখানে চৌকিদার ও চেয়ারম্যান তাকে বেদম মারপিট করেন। এতে মিরাজুল অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপন তাকে মারেননি বলে জানান। চেয়ারম্যানের দেয়া ওই ওয়ারিশান সার্টিফিকেটটি ভূয়া কিনা সে ব্যাপারে এখনো কোন সুরাহা হয়নি। এ বিষয়ে গত ১৫ মার্চ এফএনএস এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া গতমাসে চেয়ারম্যানের মদদপুষ্ট ওই সাবেক মেম্বার পরিমল চন্দ্র লাউডাঙ গ্রামে একজন মহিলার সাথে তার বাড়িতে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার সময় গভীর রাতে গ্রামবাসীর হাতে আটক হন। পরদিন চেয়ারম্যান তার আইনগত ব্যবস্থা নিবেন এই আশ্বাস দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন। কিন্তু কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধেই মামলা দেয়া হয়। গত ঈদের দুদিন আগে দুস্থ মাতাদের জন্য বরাদ্দ করা ১০ কেজি করে চাল বিতরণের সময় একটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন প্রতিনিধি তদানিন্তন এমপি সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেনের লোক পরিচয় দিয়ে তাদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণের দাবি জানান। না পেয়ে তারা কয়েকজন মেম্বার ও গ্রাম পুলিশের উপর চড়াও হয়ে মারপিট করেন। এতে মেম্বার হবিবর রহমানের হাত ভেঙ্গে যায়। এ বিষয়ে গত ২১ জুন এফএনএস এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হন। এসব নানা কারণে চেয়ারম্যানের সাথে ওই ১০ ইউপি সদস্যের দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং চেয়ারম্যান জনবিচ্ছিন্ন হতে থাকেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে চেয়ারম্যান রিপন গত শনিবার দিবাগত রাতে নওগাঁ শহরের একটি হোটেলে দুজন মেম্বার ও কয়েকজন গ্রাম পুলিশকে নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন যে, ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা চাল তার নয়, বরং ওই চাল চৌকিদার ও কয়েকজন মেম্বারের। তারা ওই চাল বিভিন্ন মসজিদ, মন্দিরে দেয়ার জন্য রেখেছিলেন। কিন্তু ১৭৫ জন নির্ধারিত দুস্থ মাতার জন্য বরাদ্দ করা চালের মধ্যে ২২ জনকে না দিয়ে সে চাল তিনি কিভাবে মসজিদ মন্দিরের জন্য রাখেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওই চালগুলো জব্দ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ও অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। এই মামলা থেকে বাঁচতে চেয়ারম্যান নতুন নতুন মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অনাস্থা প্রস্তাবকারি মেম্বাররা জানান।