নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রায় এক বছর। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পাঠদানের অনুমতি মেলেনি। ফলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের দুই বছর হতে চললেও এখনো আলোর মুখ না দেখায় হতাস হয়ে পড়েছে জেলাবাসী ও বিশিষ্টজনরা। দ্রুত পাঠদানের দাবী জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
নওগাঁবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। স্থানীয়দের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসরা অনুমোদন দেয় মন্ত্রীসভা। এরপর ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ বিল-২০২৩’ পাস হয়। এরপর দুই বছর হতে চললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য(ভিসি) ও কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ছাড়া তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় মডেল টাউনে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর জন্য অনুমোদন দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়- বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৬টি। এরমধ্যে ১২টি পদে জনবল রয়েছে। পদগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য(ভিসি) একজন, পিস টু ভিসি একজন, রেজিস্টার একজন, প্রশাসনিক কর্মকতা একজন, হিসাবরক্ষণ কর্মকতা একজন, হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার দুইজন, অফিস সহায়ক তিনজন এবং সহকারি কু একজন। বাঁকী ৪টি পদে ফাঁকা রয়েছে।
এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি যৌক্তিক স্থানে স্থাপনের দাবী জানিয়ে আসছে নওগাঁবাসী। শহর থেকে দুরে নয় এমন স্থানে স্থাপন করা প্রয়োজন। যেখানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সুবিধা, খন্ডকালিন আয়ের উৎস, শিক্ষার পরিবেশ ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকবে এমন স্থানে স্থাপন করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে শহরের চকবাড়িয়া এলাকার প্রধান সড়কের পাশে একটি ভবন ভাড়া করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হলে জ্ঞানের আরো ধাপ এগিয়ে যাবে।
নওগাঁ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, নওগাঁর ইতিহাসে এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্বিতীয়। এ জেলায় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল অষ্টম শতাব্দিতে। যা ছিল ঐতিহ্যবাহী পাহাড়পুরে সোমপুর বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন করে আরেকটি পুর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে চলেছে। এর মধ্য দিয়ে নওগাঁর ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায় সূচনা হয়েছে। যা বাংলাদেশের মানচিত্রে নতুন একটি প্রজন্ম বা নতুন একটি ইতিহাস রচনা করতে পারবো।
সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার পথ উন্মুক্ত হবে। যেখানে রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রামে যেতে হতো এখন নওগাঁয় সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণার জায়গা। নওগাঁর অর্থনীতি, কৃষি, সাহিত্য বা সংস্কৃতি যে কোন বিষয়ে নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। এজন্য দ্রুত পাঠদান চালু করা প্রয়োজন।
নওগাঁ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহা. হাছানাত আলী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর গত প্রায় আড়াই মাস থেকে শ্রেণীকক্ষে যেতে পারিনি। আমরা আশাবাদী আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হবে এবং সেই লক্ষে যা যা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাঠদান শুরু করতে একাডেমীক ভবন হিসেবে ইতোমধ্যে অস্থায়ী ভাবে একটি ভবন ভাড়া নেয়া হয়েছে। জমি একোয়ারভুক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন- আমরা বৈষম্যহীন ও মেধাবীদের ক্যাম্পাস তৈরি করতে চাই। যেখানে মেধা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হবে। যা থেকে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে। যারা আগামী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্নিমানে অবদান রাখবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য একটি ভবন ভাড়া করা হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো কোন প্রস্তাবনা চাওয়া হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে যখন রিকুইজিশন দেয়া হয় বা প্রত্যাশি সংস্থা হিসেবে চাইবে তখন আমরা পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।#