রেলের বিভিন্ন রুটে যাত্রী চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোচ ও ইঞ্জিন সংকট দেখিয়ে ট্রেন বাড়ানো হচ্ছে না। অথচ রেলওয়ের ওয়ার্কশপে অযতেœ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে প্রায় নতুন ৩৪টি কোচ। বিগত ২০২৩ সালের শেষার্ধে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৪৭টি মিটার গেজ কোচ আমদানি শুরু হয়। অত্যাধুনিক কোচগুলো একে একে সংযোজন করা হয় ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস, ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, গোধূলি ও তূর্ণা এক্সপ্রেসে। এসব ট্রেনের অবমুক্ত রেক (বিভিন্ন কোচের সমন্বয়ে তৈরি ট্রেন) পরে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-জামালপুর রুটের বিদ্যমান বিজয় এক্সপ্রেসের পাশাপাশি নতুন চালু হওয়া বুড়িমারী এক্সপ্রেসে দেয় রেলওয়ে। তবে কোনো কারণ ছাড়াই ফেলে রাখা হয়েছে গোধূলি ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের অবমুক্ত ৩৪টি কোচ। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরের রোজার ঈদের সময় নতুন চালু হওয়া ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করা ট্রেনগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি বিরতিহীন (শুধু চট্টগ্রামে ইঞ্জিনের মুখ পরিবর্তনজনিত বিরতি) আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হয়। যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় রোজার ঈদের সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন এক জোড়া বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। তবে সাময়িক চালু হওয়া ট্রেনটি জনপ্রিয়তার কারণে টানা ৫২ দিন চলাচল করে। পরে ইঞ্জিন, কোচ ও ক্রু সংকট দেখিয়ে লাভজনক হওয়ার পরও ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। সর্বশেষ কোরবানির ঈদে আরেকটি স্পেশাল ট্রেন চালু করা হলে সেটিও জনপ্রিয়তা পায়। সে কারণে ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি আরো এক মাস অর্থাৎ ২৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে রেলওয়ে। অথচ ওয়ার্কশপে পড়ে থেকে নষ্ট হতে চলা কোচগুলো বিভিন্ন রুটে ব্যবহার করে রেলের রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সূত্র জানা, দীর্ঘদিনের পুরনো কোচ দিয়ে চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জনপ্রিয় আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের চট্টলা এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটের মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পুরনো ভ্যাকুয়াম ব্রেক সিস্টেমের কোচ দিয়ে চলাচল করায় ওই ট্রেনগুলোর গতি কম। তাছাড়া ঘন ঘন নষ্ট হওয়ায় বিঘ্নিত হয় যাত্রীসেবাও। অথচ তূর্ণা ও গোধূলি এক্সপ্রেস ট্রেনের অবমুক্ত হওয়া কোচগুলো ২০১৬-১৭ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা। তবে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের দাবি, কোচগুলো অবমুক্ত হওয়ার পর কক্সবাজার স্পেশাল, চট্টগ্রাম-চাঁদপুরের মেঘনা এক্সপ্রেস ও ঢাকা-চট্টগ্রামের চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে সংযুক্ত করতে মৌখিকভাবে একাধিকবার তাগাদা দেয়া হয়। কিন্তুরেলওয়ের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগ তা আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত গত ৩০ জুন এ বিষয়ে একটি চিঠি দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রত্যুত্তর আসেনি। মূলত যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের উদাসীনতার কারণেই ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি হওয়া এয়ারব্রেক সিস্টেমের কোচগুলো ওয়ার্কশপে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ। এদিকে এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস জানান, কোন ট্রেনে কোচ সংযুক্ত হবে সেটি নির্ধারণ করে পরিবহন বিভাগ। তবে তূর্ণা ও গোধূলি এক্সপ্রেসের কোচগুলো দীর্ঘদিন চলাচল করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ওয়ার্কশপে মেরামতের জন্য রাখা হয়েছে। পরিবহন বিভাগ কিংবা রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলেই কোচগুলো অন্য যেকোনো ট্রেনে সংযোজন করতে পারে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, পূর্বাঞ্চলের মিটার গেজ ট্রেনের মধ্যে বেশকিছু ট্রেনে কোরিয়ান নতুন কোচ সংযোজন করা হয়েছে। বেশকিছু ট্রেনের অবমুক্ত কোচ সাময়িকভাবে ফেলে রাখা হলেও পর্যায়ক্রমে চাহিদাসম্পন্ন ট্রেনে যুক্ত করা হবে। এ বিষয়ে রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। যাত্রী চাহিদা বিবেচনা, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বাড়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তূর্ণা ও গোধূলি এক্সপ্রেস ট্রেনের অবমুক্ত কোচগুলো ব্যবহার করতে হবে। প্রাথমিকভাবে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হলেও দ্রুত এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা দেয়া হবে।