নওগাঁ প্রতিনিধি ঃ মান্দায় অবৈধ বালু ব্যাবসায়ীদের মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ও সমাজসেবক আজিজুল হক ওরফে ওয়ালটন বাবু। বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার ২ নং ভালাইন ইউনিয়নের চকজামদই মোড়ে তার ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন মমতাজ হোসেন, তালিম হোসেন,মুজাহিদুল ইসলাম,শামসুর সোনার,মোশারফ হোসেন,রাকিব হোসেন,এনামুল হক,জয়নাল আবেদীন এবং আব্দুল কুদ্দুসসহ ২ নং ভালাইন বিএনপি,যুবদল,কৃষকদল এবং ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ প্রমূখ।
এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পেশায় তিনি একজন ব্যাবসায়ী ও সমাজ সেবক। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি সুনামের সহিত ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছেন। অপরদিকে, প্রভাবশালী ইজারাদারের লোকজন নিয়মবর্হিভূতভাবে আত্রাই নদীর মদনচক ও লক্ষীরামপুর মৌজায় অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বালু উত্তোলন করে আসছেন। এতে নদী তীরবর্তী হাট বাজার,মসজিদ,মাদ্রাসা,মন্দির,
এছাড়াও সম্প্রতি লক্ষীরামপুর এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে এসে নদীতে পড়ে এক মাদ্রাসা ছাত্রের অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দায়ের করার পরেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় গত ৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার ২ নং ভালাইন ইউনিয়নের বানডুবি হাজী ইসমাইল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঘন্টাব্যাপী মানবন্ধনের আয়োজন করেন স্থানীয়রা। এরপর বানডুবি বাজার হতে মদনচকের দও পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এতে তিনি সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় শতাধিক লোকজন অংশ নেয়। এ ঘটনায় একাধিক জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় এবং বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গত ১২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) মান্দার আত্রাই নাদীর বিভিন্ন ভাঙ্গন পয়েন্ট পরিদর্শন করেন মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ আলম মিয়া ও এসিল্যান্ড শারমিন জাহান লুনা। সম্প্রতি তা আমলি আদালতের নজরে আসে। পরে আরও কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদ আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়।
তিনি আরো বলেন যে,আন্দোলনকারীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে করা সংবাদটি বিশ্লেষণ করে আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এটা স্পষ্ট যে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ইজারাদার রহমত উল্লাহ ও তাঁর সহযোগী মোয়াজ্জেম হাজি এবং এস.এম মেহেদী ইমাম মান্দার আত্রাই নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছেন। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়তে পারে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০-এর ধারা ৪ ও ৫-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং একই আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের সঙ্গে আরও কারা জড়িত এবং কাদের দ্বারা ও সহযোগিতায় সংঘটিত হচ্ছে, তা প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। তদন্তের মাধ্যমে আসামিদের শনাক্তের প্রয়োজন মনে করে তা তদন্তের নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট।
আদেশে আরও বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তাকে তদন্তকালে আসামিদের শনাক্ত, অপরাধ সংগঠনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নিরূপণ, সাক্ষীদের জবানবন্দি, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচিপত্র প্রস্তুত করবেন। পাশাপাশি অবৈধ বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পাওয়া গেলে তা জব্দ করবেন। এ ছাড়া বালু উত্তোলন করতে গিয়ে আরও কোনো আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে তা-ও তদন্তের মাধ্যমে নিরূপণ করবেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত ২৩ নভেম্বর এদতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক মাহবুবুজ্জামান সেতুকে মোবাইল ফোনে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং দেখে নেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করেন বালু ব্যাবসায়ী এস.এম মেহেদী ইমাম।
পরবর্তীতে ইজারাদার রহমতুল্লাহ ও তার সহযেগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৫ নভেম্বর সোমবার মান্দা উপজেলা প্রেস ক্লাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কথিত হলুদ সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমার এবং মাহবুবুজ্জামান সেতু নামে একজন পেশাদার সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ সম্মেলন করেন। যার কোন সত্যতা নেই। যেসব হলুদ সাংবাদিক বালু ব্যাবসায়ীদের উস্কে দিয়ে এসব মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন তারাই মূলত চিহ্নিত চাঁদাবাজ। তদের কাজই হচ্ছে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদাবাজি করা। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক চাদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। যা পিবিআই তদন্ত করছেন। এছাড়াও গণেশপুর ইউনিয়ন বিট পুলিশিং কার্য্যালয়ের নথি চুরির ও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অথচ, আমাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য পূর্ব আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হয়েছে। যার কোন ভিত্তি নেই। আমরা উক্ত মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ সম্মেলনের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
উল্লেখ্য, নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে একাধিক জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় এবং বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পর স্বপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করেছেন নওগাঁর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। নওগাঁর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলি আদালত, মান্দা) রবিউল ইসলাম স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি গ্রহণ করে নওগাঁর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বিশেষ পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। একই সময়ে মান্দার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অন্য নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলে তা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।