রাজধানীসহ দেশজুড়েই বাড়ছে প্রকাশ্যে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তৎপরতা। ফলে বাড়ছে হত্যা-সংঘর্ষের ঘটনাও। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। সারা দেশেই প্রতিদিন হত্যা, হামলা, ভাঙচুর, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। ফলে স্বস্তিতে নেই সাধারণ মানুষ। গত দুই মাসে সারা দেশে ৬২৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য মিলেছে। তবে রাজধানী ও চট্টগ্রামের অপরাধচিত্র বেশি খারাপ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় হত্যা, ছিনতাই, দখল, চাঁদাবাজিসহ তুচ্ছ কারণে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তাছাড়া এখনো থানা থেকে লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। ওসব অস্ত্রও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় একদল চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ভারী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। শটগান নিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে হামলা চালায়। ওই চাঁদাবাজদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় চট্টগ্রামে দিনদুপুরে স্থানীয় এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। তাছাড়া সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে একদল সন্ত্রাসী এক ব্যক্তিকে হত্যায় জড়িত। দারা সবাই ক্যাম্পের মাদক কারবারি। দীর্ঘদিন ধরে বিহারি ক্যাম্পে তারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে এরা ঘুরে বেড়ায়। তাদের মতো আরো অন্তত সাতটি গ্রুপ ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং সবাই মাদক কারবারি। তাছাড়া মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করে একদল লোক। এর একদিন পরই মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ কাঁচাবাজার মার্কেটের অফিসকক্ষে ঢুকে মার্কেটটির সভাপতি ও তাঁর ছোট ভাইকে প্রকাশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। তাঁরা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এর দুই দিন পর মোহাম্মদপুর মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেড এলাকায় ব্যস্ত সড়কে দিনদুপুরে অস্ত্রধারী ডাকাতদল বেসরকারি নেসলে কম্পানির কর্মকর্তাকে মারধর করে গাড়ি আটকে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এর আগে চারদিন ধরে জেনেভা ক্যাম্পে তুমুল সংঘর্ষ চলে। এর মধ্যে গুলিতে এক যুবক মারা যায়। একই দিন আরেকজন গলায় গুলিবিদ্ধ হন। এরপর আবারো সপ্তাহজুড়ে সংঘর্ষ হয় এবং গুলিতে গুলিতে এক অটোরিকশাচালক মারা যায়। তাছাড়া ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিতে মারা যায় এক শিশুও। সূত্র জানায়, বেপরোয়া অপরাধীদের কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। রাজধানীসহ দেশে প্রতিদিনই খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে। প্রকাশ্যে অস্ত্রধারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে অবৈধ অস্ত্রে খুনাখুনির অভিযোগ তথ্য পেয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনী অভিযানে ইতিমধ্যে ৩ শতাধিক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময়ে ১৭৪ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রিভলভার ১৯টি, পিস্তল ৭৬টি, রাইফেল ২২টি, শটগান ৩৭টি, পাইপগান আটটি, শ্যুটার গান ৪৩টি, এলজি ৩১টি, বন্দুক ৪৮টি, একে৪৭ একটি, এসএমজি পাঁচটি, গ্যাসগান চারটি, এয়ারগান ১০টি, এসবিবিএল ১০টি, টিয়ার গ্যাস লঞ্চার দুটি এবং থ্রি-কোয়ার্টার দুটি। এদিকে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে সমাজে হানাহানি আরো বাড়বে। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গুলিতে অনেক মানুষ মারা গেছে। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দ্রুত এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। অন্যদিকে এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম জানান, দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। এরই মধ্যে অনেক সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে অনেক অবৈধ অস্ত্র।